বৃহষ্পতিবার, 12 অক্টোবর 2017 22:58

অন্য রকম গল্প নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                অন্য রকম গল্প

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

দুজন কবি ছিলেন | তাদের একজন গ্রামে থাকতেন আর একজন শহরে থাকতেন | গ্রামে যে কবি থাকতেন তিনি গ্রাম ছাড়া কোনোদিন বাইরের পৃথিবী দেখেননি | আর যিনি শহরে থাকতেন তিনি শহর ছাড়া আর কিছুই দেখেননি | গ্রামে যে কবি বাস করতেন তিনি গ্রামের প্রকৃতি আর মানুষের জীবনধারা নিয়ে কবিতা লিখতেন | আর যিনি শহরে থাকতেন তিনি নগর জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতেন | আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কবিতা লেখা প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কবিদের   কাছে কবিতা পাঠানোর অনুরোধ  করা হলো | গ্রাম ও শহরের দুজন কবিই পুরুস্কৃত হলেন | তবে অবাক করা বিষয় হলো  গ্রামে যে কবি বাস করতেন তিনি নাগরিক জীবনের বিষয় নিয়ে কবিতা লিখে পুরুস্কৃত হলেন আর শহরের কবি গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরে পুরুস্কৃত হলেন | অনেকে ভাবতে পারেন,  যে মানুষ কখনো  নগর দেখেনি সে পুরুস্কার পেলো নগরজীবনের কবিতা লিখে আর যে মানুষ কখনো গ্রাম  দেখেনি সে পুরুস্কার পেলো গ্রামীণ জীবনের কবিতা লিখে-এটা কিভাবে সম্ভব | আসলে অসম্ভব বলে কিছু নেই | কবিরা সৃষ্টিশীল হন | তাদের কল্পনা শক্তি অদেখা ভুবনকে তাদের সামনে নিয়ে আসে | যার নাম হলো তৃতীয় নয়ন | ফলে তাদের মনের খোলা জানালা  গ্রাম ছেড়ে শহরে, শহর ছেড়ে  বিশ্বে আর বিশ্ব ছেড়ে  মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে |
২
এক ছোট শহরে দুজন বিখ্যাত মানুষ বাস করতেন | এদের একজন কবি আর একজন বিজ্ঞানী | কবি লিখলেন “আলো তোমার বেগে ছুটে চলি দিগন্ত ছেড়ে দিগন্তে যে কোন স্বপ্নরাঙা মুহূর্তে” | বিজ্ঞানী কবিতাটি পড়ে একটা দারুণ আইডিয়া পেলো | তিনি আলোর গতিকে ব্যবহার করে কিভাবে মুহূর্তেই একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া  যায়  তা নিয়ে গবেষণা করা শুরু করলেন | হয়তো তা একদিন বাস্তবতায় রূপ নেবে |  কবি তার আরেক কবিতায় লিখলেন “আমি সমুদ্রের গভীরে বানাতে চাই আমার বসতবাড়ি যেথায় নীল জলতরঙ্গে ভিজবে জীবন গাড়ি”|   বিজ্ঞানী কবিতাটি পড়ে আর্কিমিডিসের মতো বলে উঠলেন “ইউরেকা ইউরেকা পেয়েছি পেয়েছি”| তিনি সমুদ্রের পানির গভীরে কিভাবে মানুষে বাসস্থান, শিল্পকারখানা গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন | হয়তো এটাই আজ ও আগামীর বাস্তবতা | মাটির পৃথিবীর নিচে মানুষের বসবাসের জন্য  আরেক পৃথিবী তৈরী হবে | একদিন কবি লিখলেন আমি যৌবন ফিরে পেতে চাই আত্মার নির্ভরতায়”| বিজ্ঞানী পেলেন আরেকটি আইডিয়া | তিনি আত্মার গবেষণার মাধ্যমে চির যৌবন ধরে রাখার আবিষ্কারে মন দিলেন | কবির কল্পনা অনেকে ভাবতে পারে অবাস্তব | তবে কবিরাই আসল বিজ্ঞানী, যারা কল্পনা দিয়ে নুতন ধারণা তৈরী করেন আর বিজ্ঞানীরা তা বাস্তবে রূপ দেন | তাই একদিন বিজ্ঞানী বিনয়ী হয়ে বললেন “কবিতা একটি বিজ্ঞান আর কবিরা হলেন বিজ্ঞানীদের শিক্ষক” |   কবি সম্মানিত হলেন | তিনিও বিনীতভাবে বললেন “বিজ্ঞানীরা হলেন কবি যারা কবিতাকে বাস্তব করে তুলেন | তারা কবিদের স্বপ্নস্রষ্টা | বিজ্ঞানী মোহিত হলেন |দুজন দুজনকে আবেগে জড়িয়ে ধরলেন | সৃষ্টি হলো নুতন ইতিহাস, নুতন ধারণা |
৩
একদিন এক ফরাসি দার্শনিকের সাথে একজন স্বৈরাচারী শাসকের দেখা হলো | স্বৈরাচারী শাসক দার্শনিককে জিজ্ঞাসা করলো “বলুনতো  ক্ষমতার হাত কত বড়” | দার্শনিক বললো “ক্ষমতার হাত আগুনের মতো |” স্বৈরাচারী শাসক  অত্যন্ত কৌতুহল নিয়ে বললো “বুঝতে  পারলাম না |” উত্তরে দার্শনিক বললেন “যখন আগুনের উত্তাপ থাকে তখন আগুনে সবকিছু পুড়তে থাকে | কেউ বাঁচতে পারেনা | কিন্তু আগুন যখন থেমে যায় তখন সবকিছু ছাই হয়ে যাই | আর দমকা বাতাসে  তা উড়ে চলে যায় | তখন আগুনের কোনো অস্তিত্ব থাকেনা | ক্ষমতার হাত  ততটুকু যতক্ষণ আগুন জ্বলতে থাকে আর আগুনের উত্তাপ থাকে | তারপর ঐ হাতের কোনো অস্তিত্ব থাকেনা |” স্বৈরাচারী শাসক দার্শনিক বললো “আমাকে সবাই সুশাসক না বলে  স্বৈরাচারী বলে কেন?” দার্শনিক বললেন “এটা ব্যক্তির উপর নির্ভর করে | যারা আপনার দ্বারা উপকৃত হয় তারা আপনাকে স্বৈরাচারী বলে কারণ তারা আরো বেশি পেতে চায় | তাদের চাহিদার  কোনো শেষ থাকেনা | আর যারা আপনার দ্বারা শোষিত হয় তারাতো আপনাকে  স্বৈরাচারী বলবেই | তবে এর সঠিক উত্তর দিতে পারে আপনার বিবেক | মনের আয়নার সামনে দাঁড়ান আর বিবেককে  জিজ্ঞাসা করুন আপনি কে? উত্তরটা পেয়ে যাবেন |” যখন  স্বৈরাচারী শাসক দার্শনিকের সাথে কথা বলছিলেন তখন তার স্ত্রী এতে বিরক্তি প্রকাশ করতে লাগলেন আর চোখ রাঙিয়ে রাগতস্বরে বললেন “তোমার রাতে আজ খবর আছে |” দার্শনিক কানে কানে   স্বৈরাচারী শাসককে বললেন “আপনার থেকে আপনার স্ত্রী বেশি স্বৈরাচারী বলে মনে হচ্ছে | স্বৈরাচারী বিষয়টা আবার কমবেশি হতে পারে | যাক বিচারের ভার আপনার উপর |” স্বৈরাচারী শাসক দার্শনিককে বললেন “আমার ও আমার স্ত্রীর থেকে আপনি বেশি স্বৈরাচারী |” দার্শনিক জিজ্ঞেস করলো কেন | স্বৈরাচারী শাসক বললেন “আমার কানের কাছে চুপিসারে কথা বলে আমার স্ত্রীর মধ্যে যে সন্দেহ তৈরী করলেন তা আমাকে সারাজীবন ভুগাবে |” আসলে কে স্বৈরাচারী তা বলা খুব কঠিন | পৃথিবীটা বুঝি এমনই একটা অদ্ভুত জায়গা |
এখানে শিক্ষণীয় বিষয় গুলো হলো
১ | মানুষ যদি সৃজনশীল হয় তবে তার দৃষ্টিভঙ্গি অনেক প্রসারিত হতে পারে | তার ভিতরের সৃষ্টিশীলতা তাকে সামনে এগিয়ে  নিয়ে যায় | অনেক অদেখা ভুবন তার কল্পনা শক্তি দিয়ে সে দেখতে পায় |
২| কবিরা বিজ্ঞানীদের শিক্ষক হতে পারে আর বিজ্ঞানীরা কবিতাকে বাস্তবতায় রূপ দেয় | দুজনেই একে অন্যের পরিপূরক |আর বিনয় কেবলমাত্র প্রকৃত যোগ্য মানুষেরাই দেখতে পারে |
৩| পৃথিবীতে কে স্বৈরাচারী তা বলা খুব কঠিন | এটা ব্যক্তির বিবেচনা ও বিবেকের উপর নির্ভর করে।            
            
751 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর এ দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি যেমন অবদান রেখে চলেছেন তেমনি সৃষ্টিশীল লেখার ক্ষেত্রেও তাঁর পদচারণা। তিনি মনে করেন বিজ্ঞান চর্চা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অন্যের পরিপূরক। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, গবেষক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, কবি, গীতিকার, নাট্যকার, সমাজ সংস্কারক ও সাংস্কৃতিক কর্মী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনে বিশ্বাসী এই মানুষটির ছোটবেলা থেকেই লেখায় হাতেখড়ি। কৈশোর ও তারুণ্যে তিনি বাংলা একাডেমি, খেলাঘর, কঁচিকাচার মেলা সহ বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেছেন। এই সময় তাঁর প্রবন্ধ, কবিতা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকৌশল বিদ্যা অধ্যায়নের সময় তিনি প্রগতিশীল কর্মী হিসেবে কাজ করে সহিত চর্চা করে গেছেন। এ সময় তাঁর লেখাগুলো বিশ্ববিদালয়ের ম্যাগাজিনে এখনও সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও অনেকদিন ধরেই তিনি দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন। বাংলা ও ইংরেজি দুই সাহিত্যেই তাঁর সমান দক্ষতা রয়েছে। সমাজ, রাষ্ট্র, প্রকৃতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, পরিবর্তন, সম্ভাবনা ও মানুষ তাঁর লেখার মূল উপজীব্য বিষয়। তিনি একজন ভাল বক্তা। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক্ শো সহ বিভিন্ন সৃজনশীল অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি হিসেবে দেখা যায়। ভারতরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী অজিত কুমার পাঁজা কলকাতা দূরদর্শনের একটি প্রতিযোগিতায় তাঁর প্রেরিত প্রবন্ধে মোহিত হয়ে নিজ হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সে সময় সম্প্রচারিত হয়। এই খবরটি আজকাল, সংবাদ, বাংলাবাজার সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এছাড়া তিনি ফিলিপিন্স, চীন, বি-টিভি সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন পুরুস্কারে ভূষিত হন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের একজন কর্মী হিসেবে তিনি কাজ করে চলেছেন।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী এর সর্বশেষ লেখা

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.