এই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করুন
শুক্রবার, 16 সেপ্টেম্বর 2016 05:47

সুরাইয়ার পাঠশালা

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(1 ভোট)
                ছোট্ট খুকি সুরাইয়া। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ও পেটে থাকতেই তার মায়ের খেয়াল ছিল সন্তানকে দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। দুনিয়াবী শিক্ষায় লাভের চেয়ে ক্ষতিট আশংকাই বেশী। অন্যদিকে দ্বীনী শিক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষতি বলতে কোন শব্দ নেই। সুরাইয়ার বয়স পাঁচ পেরিয়ে এখন ছয়।
 পাশের গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেব মেয়েদের জন্য একটি মাদরাসা খুলেছেন।আভ্যন্তরীণ তত্বাবধানে ইমাম সাহেবের স্ত্রী ও কয়েকজন মহিলা সহযোগী রয়েছেন শিক্ষিকা হিসাবে।ছাত্রীরা তাদের খালাম্মা বলে ডাকে।
 ইমাম সাহেব খুব ভাল মানুষ এবং জাঁদরেল আলেম । পুরো ইউনিয় জুড়ে রয়েছে তার নামডাক। সুরাইয়াকে ইমাম সাহেবের মাদরাসাতেই পড়াবেন তার মা-বাবা।এই উদ্দেশ্যে একদিন মাদরাসাটা ভালভাবে দেখে আসে সুরাইয়ার মা। পরিবেশ পছন্দমত হয়েছে। সুরাইয়াকে ভর্তি করানো হলো নূরানী প্রথম শ্রেণীতে অনাবাসিক হিসাবে।বাবা সকালে সাইকেলে করে দিয়ে আসেন, আবার দুপুরবেলা খাবার নিয়ে যান।সন্ধেবেলা আবার নিয়ে আসেন।
 পড়ায় মনোযোগ আছে তার।আচরণেও অমায়িক। এসবের পিছনে তার মায়ের অবদান যথেষ্ট রয়েছে।প্রত্যেক নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
 সুরাইয়া ক্লাসেও সেরা। সবার ভাল বন্ধু।সবসময় সহাস্যমুখে কথা বলা তার বিশেষ ভূষণ। কারো দূঃখে ব্যথিতা হয়ে দূঃখ ঘুচানোতেও লেগে পড়ে সাধ্যমত।একদিনের ঘটনা।    আফীফা।তার সহপাঠী।সেও তার মতন হাসিখুশি থাকে।কিন্তু আজকে তার চেহারাটা একটু অন্যরকম দেখাচ্ছিল।মনে হচ্ছিল খুব পেরেশান সে।সুরাইয়া কাছে আসল আফীফার।
-মুখটা অমন করে রাখছ কেন, কী হয়েছে তোমার, আম্মু বকা দিয়েছে  নাকি আব্বু মেরেছে? সুরাইয়া আফীফাকে বলল।
কোন উত্তর নেই আফীফার। চোখ থেকে মুক্তোদানার মত কয়েক ফোটা পড়ল। কিছু বলছে না,শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিল সুরাইয়া।
কাঁদো কাঁদো গলায় ভাঙা ভাঙা স্বরে আফীফা বলল,বৃষ্টিতে ভিজে আমার বই ছিড়ে গেছে।আম্মু আমাকে বই কিনে দেয়না।বলে যে টাকা নেই। বই দিতে পারব না।এখন আমি কী দিয়ে পড়ব। সুরাইয়া একটু চিন্তা করল,কিছু করা যায় কিনা। একটু পর বলল, আজকে তুমি আমি একসাথে বসব।আমার বই দিয়েই দুজনে পড়ব।
 আফীফারা খুব গরীব। তার মা মাদরাসার পাচকিনী। বাবা রিকশা চালাত মেইনরোডে।একদিন এক লরির সাথে এক্সিডেন্ট হয়।মারা যায় তার বাবা ও দুইজন যাত্রী। তার মায়ের কাছে টাকা নেই এখন।তাই বই কিনে দিতে পারছে না।সবার বই আছে ষথচ তার বই এই কথা ভেবে খারাপ লাগছিল আফীফার।
  বাবার সাথে বাড়ি আসল সুরাইয়া। রাতে খানা খাওয়ার সময় আফীফার কথা বলল। মেয়ের কথা শুনে মা বলল,হয়ত তারা অনেক গরীব। আফীফার বই কেনার টাকা হয়ত নেই।সুরাইয়ার ইচ্ছা,আফীফার যেহেতু বই নেই,বইয়ের জন্য সে কাঁদে এজন্য তাকে বই পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। মাকে বলল সুরাইয়া,আম্মু বই কিনতে অনেক টাকা লাগে না বোধ হয়।এক সিট বই আফীফাকে দেওয়া যায় না! ও খুব কান্না করছিল বইয়ের জন্য  আমারো খুব খারাপ লাগছিল।
মেয়ের কথা শুনে মা মিটিমিটি হাসে।অন্তরে তৃপ্তি অনুভব করে মেয়ের এমন উদ্যোগের কারণে। মা তাকে আশ্বাস দেয় যে,আফীফার বইয়ের ব্যবস্থা করে দিবে। পরদিন আফীফার জন্যেও একসিট বই কিনে নিয়ে যায় সুরাইয়ার আব্বু।ও প্রথমে নিতে চায় নি।সুরাইয়ার জোড়াজুড়িতে নিয়ে নেয়।            
            
810 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
মুহিব্বুল্লাহ খন্দকার

মুহিব্বুল্লাহ খন্দকার এর সর্বশেষ লেখা