এই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করুন
মঙ্গলবার, 01 সেপ্টেম্বর 2020 18:13

ছাত্রধারা নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(1 ভোট)
                বর্ষে-বর্ষে দলে-দলে               আসে বিদ্যামঠতলে,
             চলে যায় তারা কলরবে,
কৈশোরের কিশলয়              পর্ণে পরিণত হয়
             যৌবনের শ্যামল গৌরবে |
ভালোবাসি, কাছে ডাকি,    নামও সব জেনে রাখি,
             দেখাশোনা হয় নিতি-নিতি,
শাসন-তর্জন করি              শিখাই প্রহর ধরি,
             থাকেনাকো, হায়, কোনো স্মৃতি!
ক-দিনের এই দেখা              সাগর সৈকতে রেখা
             নূতন তরঙ্গে মুছে যায় |
ছোট-ছোট দাগ পার              ঘুচে যায় একাকার
             নব-নব পদ-তাড়নায় |
জানে না কে কোথা যাবে,   জোটে হেথা তাই ভাবে
             পাঠশালা,— যেন পান্থশালা,
দু-দিন একত্রে মাতে,       মেলে-মেশে, বসে গাঁথে
             নীতি-হার আর কথা-মালা |
রাজপথে দেখা হলে              কেহ যদি গুরু বলে
             হাত তুলে করে নমস্কার,
বলি তবে হাসিমুখে—     “বেঁচে-বর্তে থাকো সুখে,”
             স্পর্শ করি কেশগুলি তার |
ভাবিতে-ভাবিতে যাই—    কি নাম? মনে তো নাই,
             ছাত্র ছিল কত দিন আগে ;
স্মৃতি সূত্র ধরি টানি,              কৈশোরের মুখখানি
             দেখি মনে জাগে কি না জাগে |
ঘন-ঘন আনাগোনা               কতদিন দোখাশোনা,
             তবু কেন মনে নাহি থাকে?
“ব্যক্তি” ডুবে যায় “দলে”,         মালিকা পরিলে গলে
             প্রতি ফুলে কে বা মনে রাখে?
এ জীবন ভেঙে-গড়ে              শ্যামল-সরস করে
             ছাত্রধারা বয়ে চলে যায়,
ফেনিলতা-উচ্ছলতা              হয়ে যায় তুচ্ছ কথা,
             উত্তালতা সকলি মিলায় |
স্বচ্ছতায় শুধু হেরি              আমার জীবন ঘেরি
             ভাসে শুধু ম্লান মুখগুলি ;
ভুলে যাই হট্টগোল              অট্টহাসি-কলরোল,
             ম্লান মুখ কখনো না ভুলি |
কেহ বা ক্ষুধায় ম্লান,              কেহ রোগে ম্রিয়মান,
             শ্মে কারো চাহনি করুণ,
কেহ বা বেত্রের ডরে              বন্দী হয়ে রয় ঘরে,
             নেত্র কারো তন্দ্রায় অরুণ |
কেহ বাতায়ন-পাশে              চেয়ে রয় নীলাকাশে
             যেন বদ্ধ পিঞ্জরের পাখি,
আকাশে হেরিয়া ঘুড়ি              মন তার যায় উড়ি,
             মুখে কালো ছায়াখানি রাখি |
স্মরিয়া খেলার মাঠ              কেউ ভুলে যায় পাঠ,
             বুদ্ধিতে বা কারো না কুলায়,
কেহ স্মরে গেহকোণ,              স্নেহময় ভাইবোন—
             ঘড়ি-পানে ঘন-ঘন চায় |
ডাকিছে উদার বায়ু              লয়ে সাস্থ লয়ে আয়ু,
             ডাক শোনে বসে রুদ্ধ ঘরে,
হাতে মসী, মুখে মসী,              মেঘে ঢাকা শিশু-শশী—
             প্রতিবিম্বে মোর স্মৃতি ভরে |
আর সবি গেছি ভুলি,              ভুলিনি এ মুখগুলি,
             একবার মুদিলে নয়ন
আঁখিপাতা ভারি-ভারি,              ম্লান মুখ সারি-সারি
             আকুল করিয়া তোলে মন |            
            
612 বার পড়া হয়েছে সর্বশেষ হালনাগাদ মঙ্গলবার, 01 সেপ্টেম্বর 2020 18:32
শেয়ার করুন
কালিদাস রায়

কালিদাস রায় (২২ জুন ১৮৮৯ – ২৫ অক্টোবর ১৯৭৫) ছিলেন রবীন্দ্রযুগের বিশিষ্ট রবীন্দ্রানুসারী কবি, প্রাবন্ধিক ও পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা। তার রচিত কাব্যগুলির মধ্যে তার প্রথম কাব্য কুন্দ (১৯০৮), কিশলয় (১৯১১), পর্ণপুট (১৯১৪), ক্ষুদকুঁড়া (১৯২২) ও পূর্ণাহুতি (১৯৬৮) বিশেষ প্রশংসা লাভ করে। গ্রামবাংলার রূপকল্প অঙ্কনের প্রতি আগ্রহ, বৈষ্ণবপ্রাণতা ও সামান্য তত্ত্বপ্রিয়তা ছিল তার কবিতাগুলির বৈশিষ্ট্য। তিনি আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। তিনি রবীন্দ্র-ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন। এরপরে কবিতা, ছোটগল্প, রম্য সাহিত্য ইত্যাদি রচনা করেন। 'বেতালভট্ট' ছদ্মনামে লিখিত বহু রসরচনা পাঠক সমাজে সমাদৃত ।

কালিদাস রায় এর সর্বশেষ লেখা

3 মন্তব্য