এই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করুন
বৃহষ্পতিবার, 20 আগষ্ট 2020 13:58

আজব লড়াই নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                ফেব্রুয়ারী মাসে ভাই, কলকাতা শহরে 
ঘটল ঘটনা এক, লম্বা সে বহরে! 
লড়াই লড়াই খেলা শুরু হল আমাদের, 
কেউ রইল না ঘরে রামাদের শ্যামাদের; 
রাস্তার কোণে কোণে জড়ো হল সকলে, 
তফাৎ রইল নাকো আসলে ও নকলে, 
শুধু শুনি ‘ধর’ ‘ধর’ ‘মার’ ‘মার’ শব্দ 
যেন খাঁটি যুদ্ধ এ মিলিটারী জব্দ। 
বড়রা কাঁদুনে গ্যাসে কাঁদে, চোখ ছল ছল 
হাসে ছিঁচকাঁদুনেরা বলে, ‘সব ঢাল জল’। 
ঐ বুঝি ওরা সব সঙ্গীন উঁচোলো, 
ভয় নেই, যত হোক বেয়নেট ছুঁচোলো, 
ইট-পাটকেল দেখি রাখে এরা তৈরি, 
এইবার যাবে কোথা বাছাধন বৈরী! 
ভাবো বুঝি ছোট ছেলে, একেবারে বাচ্চা! 
এদের হাতেই পাবে শিক্ষাটা আচ্ছা; 
ঢিল খাও, তাড়া খাও, পেট ভরে কলা খাও, 
গালাগালি খাও আর খাও কানমলা খাও। 
জালে ঢাকা গাড়ি চড়ে বীরত্ব কি যে এর 
বুঝবে কে, হরদম সামলায় নিজেদের। 
বার্মা-পালানো সব বীর এরা বঙ্গে 
যুদ্ধ করছে ছোট ছেলেদের সঙ্গে; 
ঢিলের ভয়েতে ওরা চালায় মেশিনগান, 
“বিশ্ববিজয়ী” তাই রাখে জান, বাঁচে মান। 
খালি হাত ছেলেদের তেড়ে গিয়ে করে খুন; 
সাবাস! সাবাস! ওরা খেয়েছে রাজার নুন।  
 
ডাংগুলি খেলা নয়, গুলির সঙ্গে খেলা, 
রক্ত-রাঙানো পথে দু’পাশে ছেলের মেলা; 
দুর্দম খেলা চলে, নিষেধে কে কান দেয়? 
ও-বাড়ি ও ও-পাড়ার কালো, ছোটু প্রাণ দেয়। 
স্বচে দেখলাম বস্তির আলী জান, 
‘আংরেজ চলা যাও’ বলে ভাই দিল প্রাণ।  
 
এমন বিরাট খেলা শেষ হল চটপট 
বড়দের বোকামিতে আজো প্রাণ ছটফট; 
এইবারে আমি ভাই হেরে গেছি খেলাতে, 
ফিরে গেছি দাদাদের বকুনির ঠেলাতে; 
পরের বারেতে ভাই শুনব না কারো মানা, 
দেবই, দেবই আমি নিজের জীবনখানা ।            
            
656 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
সুকান্ত ভট্টাচার্য

সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৫ই আগস্ট, ১৯২৬ - ১৩ই মে, ১৯৪৭) বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি। ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট মাতামহের ৪৩, মহিম হালদার স্ট্রীটের বাড়ীতে,কালীঘাট,কলকাতায় তার জন্ম।। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার, বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার, উনশিয়া গ্রামে। ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। এ সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুনাচল বসু। সুকান্ত সমগ্রতে লেখা সুকান্তের চিঠিগুলির বেশিরভাগই অরুনাচল বসুকে লেখা। অরুনাচল বসুর মাতা কবি সরলা বসু সুকান্তকে পুত্রস্নেহে দেখতেন। সুকান্তের ছেলেবেলায় মাতৃহারা হলেও সরলা বসু তাকে সেই অভাব কিছুটা পুরন করে দিতেন। কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ীতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পাশের বাড়ীটিতে এখনো বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাস ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের নিজের ভাতুষ্পুত্র।

সুকান্ত ভট্টাচার্য এর সর্বশেষ লেখা

1 মন্তব্য